Categories
See All >
খুসখুসে বা শুকনো কাশি,কারন,করনীয় ও সমাধান

খুসখুসে বা শুকনো কাশি,কারন,করনীয় ও সমাধান

Health Blogs
Hit Count : 1507

একটা অনুৎপাদক প্রকৃতির বিরক্তিকর কাশি যাতে কোনো কফ বা শ্লেষ্মা নির্গমণ হয় নাতাকে শুকনো কাশি বলা হয়।সাধারণত এর সাথে গলায় একটা সুড়সুড়ে ভাব অনুভব হয়

 

খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তকর ও বিব্রতকর অসুখ। একবার কাশি শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। যখন-তখন, যেখানে –সেখানে শুরু হয়ে যেতে পারে কাশি। জ্বর নেই, কফ বের হওয়া নেই, বুকে ঘড় ঘড় নেই কিন্তু খুক খুক কাশি, যা বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। যার অর্থ, কাশির সঙ্গে কখনো কফ বেরোয় না, কিন্তু একটা অস্বস্তি গলায়-বুকে লেগেই থাকে।


এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, খুক খুক শুকনো কাশি যখন-তখন অনেককে ভোগায়, বিব্রতও করে। কারও সারা বছর খুসখুসে কাশি লেগে থাকে। সব সময় কাশি সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক বা কাশির ওষুধের দরকার নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বারবার শুকনো কাশির কারণ ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি নয়, বরং অন্য কিছু। যার কারণটা খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা উচিত।


কারণ:

· ঋতু পরিবর্তন

ঋতু পরিবর্তনের সময় কাশির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কখনও শুকনো খুসখুসে কাশি,কখনও হয়তো ঠান্ডা লেগে একেবারে কফ-কাশি।

·         ভাইরাস ও অ্যালার্জি

কাশি হলে অনেক সময়ে গলা ফুলে যায়। আর ভাইরাসের কারণে শ্বাসনালী ফুলে গিয়ে এই কাশি অনেক দিন থাকতে পারে। অ্যালার্জি থেকেও কাশি হতে পারে। মূলত বাইরের ধুলো থেকে যে অ্যালার্জি হয়, যাকে ডাস্ট অ্যালার্জি বলে, তার থেকে সবচেয়ে বেশি কাশি হয়।

·         স্প্রে ব্যবহার

কোনো কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে আমরা নাকে স্প্রে ব্যবহার করি। অনেক সময়ে এগুলো ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই ব্যবহার করা হয়। আর দিনের পর দিন ধরে এগুলো ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার কাশি হওয়া স্বাভাবিক।

·         ব্যাকটেরিয়া

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও কাশি হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার কারণে সাইনাস ইনফেকশন, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হয়। এর সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর আসতে পারে।

·         যক্ষ্মা

যক্ষ্মার জন্যও কিন্তু কাশি হতে পারে। আর এই কাশির সঙ্গে রক্তপাত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।

·         অ্যাসিডিটি

অ্যাসিডিটি ভারী বা চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর বুকে জ্বালাপোড়া বা টক ঢেকুরের সঙ্গে খুক খুক কাশিও হতে পারে। পাকস্থলীর অম্ল খাদ্যনালিতে উঠে এসে এই কাশির সৃষ্টি করে।

·         ক্যানসার ও ধূমপান

বয়স্ক ও ধূমপায়ী ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের কাশি, জ্বর, পুরোনো কাশির নতুন ধরন, কফের সঙ্গে রক্ত এসব উপসর্গ থাকলে সাবধান। ফুসফুসের ক্যানসার হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

·         হৃদরোগ

হৃদরোগের কারণেও ক্রনিক কাশি হয়। শরীরে পানি জমা, দুর্বলতা, সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট এগুলো হৃদ্রোগের দিকেই নির্দেশ করে।

·         পর্যাপ্ত তরল পান না করা

যখন ঠান্ডা হবে, তখন প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানি, জুস ও স্যুপ শ্বাসনালি থেকে কফ বা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। কিন্তু ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা বা কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে, যা বিপরীত কাজ করতে পারে। 

·         মানসিক চাপ

মানসিক চাপ, বিশেষ করে যখন এটি তীব্রতর হয়, তখন এটি ঠান্ডার স্থায়িত্বকালকে বাড়াতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাশির মোকাবিলা করতে, যখন আপনি অসুস্থ থাকবেন, তখন আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন। নিজের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করলে আপনি হয়তোবা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। প্রশান্তিতে থাকার একটি উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন, রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।

·         ওষুধ

কোনো কিছুতেই কাশি না সারলে ও পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া গেলে লক্ষ করুন কোনো ওষুধের জন্য এটি হচ্ছে কি না। যেমন উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোনো ওষুধ সেবনের কারণেও কাশি এত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র শুকনো কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।


নির্ণয় ও সমাধান

প্রাথমিকভাবে আপনার চিকিৎসক আপনার কাশি ও অন্যান্য উপসর্গগুলোর বিশদ ইতিহাস জানতে চাইবেন, এর পরে আপনার শারীরীক পরীক্ষা করা হবে। চিকিৎসাগত ইতিহাস, ব্যক্তির বয়স, ও পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে, চিকিৎসক আপনাকে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করতে বলতে পারেন:

ü  অ্যালার্জি পরীক্ষা।

ü  ছাতির এক্স-রে।

ü  গলার লালার নমুনা (গলার ভিতরের দিক থেকে লালার একটা নমুনা সংগ্রহ করা হয়, এবং নমুনাটি সংক্রমণের কারণ জানার জন্য পরীক্ষা করা হয়।

ü  পাল্মোনারী কার্যকারীতার পরীক্ষা। শুকনো কাশির চিকিৎসা এর কারণগুলোর উপর নির্ভর করে (যেমন, ভাইরাস সংক্রমণের জন্য কাশিতে নিজেকে নিজের যত্ন নিতে হয় এবং এটা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

শুকনো কাশির থেকে আরাম পাওয়ার জন্য নিচের চিকিৎসাগুলো বলা হয়:

কাশি দমনকারী (লজেন্স হিসাবে উপলব্ধ যাতে অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়া আছে )বা তরল পদার্থ বা লিঙ্কটাস। যেগুলো কাশিকে চাপা দিতে সাহায্য করে যেমন:

Ø  ​ফল্কোডিন

Ø  ডেক্সট্রোমেথোর্ফেন

Ø  কোডেইন

Ø  ডাইহাইড্রোকোডেইন

Ø  পেন্টোক্সাইভেরিন।


এছাড়াও নিম্নোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসা গুলি খুবই কার্যকরীয়:

মধুঃ কাশি দূর করতে মধুর ব্যবহার ভীষণ কার্যকরী। মধু শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে। তাই কাশির সময়ে নিয়ম করে লেবু-মধুর চা খান। ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু নিন। প্রথমে লেবু দিয়ে চা বানিয়ে নিন। তার মধ্যে মধু দিন। এবার এই চা গরম গরম পান করুন। রোজ দুই বেলা খান। দেখবেন এক সপ্তাহে কাশি দূর হয়ে যাবে।
হলুদঃ হলুদ কাশি কমানোর ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ দেয়। হলুদে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান কাশির সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। আপনাকে শুধু কয়েক দিন দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে। এক গ্লাস গরম দুধ, আধ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১ চামচ মধু নিন। গরম দুধে হলুদ আর মধু ভালো করে গুলে দিনে একবার খান। এতে খুব দ্রুত আরাম পাবেন।
আদা ও লেবুর শরবতঃ কাশি হলে আদা খান। আদা শ্লেষ্মার সমস্যায় খুব ভালো কাজ দেয়। এক কাপ পানি, কয়েক কুচি আদা, ১ চামচ লেবুর রস, মধু। পানি হালকা গরম করুন। তার মধ্যে এবার আদা কুচি, লেবুর রস আর মধু দিন। মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটা দিনে তিন থেকে চার বার খেতে পারেন। খুবই উপকার পাবেন।
রসুনঃ কাশি দূর করতে রসুনও কার্যকরী। রসুনে অ্যালিসিন নামের একটি উপাদান আছে যা জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে, ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে তার বৃদ্ধি আটকায়। আর রসুন শরীর গরমও রাখে। তাই রসুন শুষ্ক কাশি কমাতে খুবই দরকারী। খাওয়ার সময়ে শুরুতে একটু গরম ভাতে তেলে ভিজিয়ে রাখা রসুন চটকে খেয়ে নিন। দেখবেন বেশ কয়েক দিন খেলে উপকার পাবেন।
তুলসীঃ কাশি সারানোর জন্য তুলসি পাতা খেতে পারলে তা সবচেয়ে ভালো। ১ চামচ তুলসি পাতার রস, মধু নিন। তুলসি পাতার রস আর মধু প্রতিদিন সকালে খেয়ে নিন ঘুম থেকে উঠে। এক সপ্তাহ খান। কাশি দূর হবে।
গার্গেলঃ গরম জলে কুলকুচি বা গার্গিল করা প্রয়োজন, এই সময় নিয়মিত গরম জল করে তাতে অল্প নুন বা একটি ডিসপ্রিণ দিয়ে, তা দিয়ে যদি গার্গিল করা যায়, সহজেই মিলবে স্বস্তি।

এছাড়াও:

Ø  ধূমপান ও বায়ুদূষণ কাশির একটি অন্যতম কারণ। তাই ধূমপান বর্জন করুন।
Ø  ধুলাবালুতে কাশি হলে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঝুল ঝাড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
Ø  ঠান্ডায় সমস্যা হলে গোসলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। ঠান্ডা পানি খাবেন না।
Ø  গরম পানির ভাপ নিতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগলে, বিশেষ করে ধূমপায়ীরা সতর্ক হোন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র

1.https://www.jagonews24.com/lifestyle/article/579479

2.https://zeenews.india.com/bengali/health/avoid-these-foods-during-cough_162719.html

3. https://www.myupchar.com/bn/disease/dry-cough

4.https://bangla.asianetnews.com/life/tips-to-relief-from-cough-problem-pt8se3

5.https://www.prothomalo.com/life/health/খুসখুসে-কাশি-হলে-কী-করবেন